জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

 

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গোলোকধাম হতে এ পৃথিবীতে মানুষ রুপে অবতীর্ণ হওয়ার পূণ্য তিথি। এই উপলক্ষ্যে

সকল ভাইবোন ও বন্ধুদের জানাই কৃষ্ণের অশেষ প্রীতিময় শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। আজ পরমকরুনাময় ভগবানের শ্রীকৃষ্ণ রুপী মানব শরীরে এ ধরাধামে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়ে জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু বলছি।

পরমকরুনাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, মাতা দেবকী, পিতা বসুদেবের পুত্র রুপে ভাদ্রমাসে, কৃষ্ণপক্ষে, অষ্টমী তিথি, রোহিনী নক্ষত্রে, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাতে, কংসের কারাগারে জন্মগ্রহন তথা গোলোকধাম হতে এ ধরায় আবির্ভূত হন। আবার ঝড়ঝঞ্ঝা বৃষ্টির মধ্যে শৃগালীর পথ প্রদর্শনে উত্তাল যমুনা পার হন অনন্তনাগের ছত্রছায়ায়। কি অদ্ভুত তাইনা? এবার দেখি এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য।

 


দেবকী হলেন 'দৈবশক্তি' আর বসুদেব হলেন 'জীবাত্মা'। পঞ্চ প্রাণের পিতা বলে তিনি বসুদেব। প্রকৃত পক্ষে বসুদেব এবং দেবকী হলেন জীবাত্মা ও পরাপ্রকৃতির প্রতীক। ভাদ্র মাসের বৈদিক নিরুপণ হলো, ভদ্র+ষ্ণ=ভাদ্র। অর্থাৎ ভাদ্র মাস শুভ বা মঙ্গলের মাস। আমরা জানি, কৃষ্ণপক্ষে চন্দ্রের শক্তি ক্ষয় বা ক্ষীণ হয় এবং শুক্লপক্ষে এর শক্তি বৃদ্ধি পায়। অন্তর্জগতে চন্দ্র হচ্ছে 'মন'। অর্থাৎ মনই চন্দ্র। অষ্টমী তিথিতে চন্দ্রের তথা মনের ক্ষয় হতে হতে অর্ধেকে গিয়ে পৌঁছায়। মনের চঞ্চলতা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। সাধনার মোক্ষম সময়। মন যখন বহির্জগতের কামনা বাসনা মুক্ত হয়, তখনই তা অন্তর্মুখি হলে, অপুর্ব জ্যোতি দর্শন করা যায়। মাটি, জল, তেজ, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহংকার, এই অষ্টতত্ত্বই আমাদের জীব প্রকৃতি। শ্রীকৃষ্ণ ত্রিগুনাতীত বিশ্বপ্রতিভূ। অষ্ট প্রকৃতির উর্ধ্বে তিনি। তাই কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে তাঁর জন্ম।

ভগবান জন্ম নিলেন কংসের কারাগারে। কংস শব্দটি, কম্+স=কংস। 'কম্' মানে কামনা বাসনা। কারাগার থাকে রুদ্ধ, হলো উন্মুক্ত। অর্থাৎ কামনা বাসনা যুক্ত দেহরুপ কারাগারের রুদ্ধ দুয়ার একমাত্র প্রাণকৃষ্ণের কৃপায় খুলে যায়। অন্য কোনো ভাবে নয়।

যমুনা শ্রীকৃষ্ণের অতিপ্রিয়। মানব দেহের দক্ষিণ অংশে যা পিঙ্গলা নাড়ী। সাধক পিঙ্গলা রুপী যমুনা পার হতে পারলে, আনন্দ লোকের সন্ধান পান, হয় আত্মদর্শন। বসুদেবকে যমুনা পার করায় শিবশক্তি রুপী শিবা। যিনি সহস্রারের মহাপদ্মে বিরাজিতা, তিনিই শিবাজি তথা শিবশক্তি। শিবশক্তি সহায় থাকলে, ভবনদী সহজে পার হওয়া বা অতিক্রম করা যায়। তার উপর অনন্ত শক্তিধারী, ফনা রুপিনী সর্প, কুন্তলিনী শক্তির প্রতীক।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, শৃগালী রুপী শিবশক্তি, জীবাত্মারুপ বসুদেব, পরমাত্মারুপ শ্রীকৃষ্ণ আর অনন্ত শক্তির প্রতীক কুন্ডলিনী, এদের সমন্বিত যোগচিত্রায়িত রুপই শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নির্দেশ করে।

জয় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

 

পরমকৃপাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্যদদের শ্রীচরণকমলে প্রার্থনা করি, সবার জীবন যেনো রাধাকৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে মঙ্গলময়, কল্যাণময়, প্রেমময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় করে রাখুন নিরন্তর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ